মোটরসাইকেল চালানোর টিপসঃ খাটো ব্যাক্তিদের জন্য
আপনি মোটরসাইকেল চালাতে আগ্রহী। কিন্তু দেখলেন যে, আপনি খাটো হওয়ার কারনে মোটরসাইকেল চালাতে পারছেন না। হয়তবা আপনি ভুল কৌশল এর জন্য ভালোভাবে চালাতে পারছেন না।
আমার উচ্চতা ৫.২ ইঞ্চি, এবং আমি প্রায় সব ধরনের বাইক চালাতে পারি। আপনি বাইক চালাতে পারবেন না এমন কথা কেউ বললে কান দিবেন না। সঠিক কৌশল অবলম্বন করলে আপনার ইচ্ছা এবং সাহসই আপনাকে সাহায্য করবে।
বাইক চালানোর ক্ষেত্রে যে বিষয় গুলি আপনার মাথায় রাখতে হবেঃ
- মোটরসাইকেল এর সিটের উচ্চতা এবং হ্যান্ডেলবার ও পায়ের কন্ট্রোল। বাইক এর সিটের শেপ এবং বাইকের প্রস্থ উভয়। এছাড়াও ওজন, বাইকের ওজন যত বেশি, হ্যান্ডেল করা ততই কঠিন।
- প্রথমেই, বাইকের সিটের উচ্চতা দেখুন। বাইক চালানো শুধুমাত্র কমফোর্ট এর জন্য নয়, এর মধ্যে অনেক কন্ট্রোল করাটাও গুরুত্তপুর্ণ। আপনি যদি আপনার বাইক চালানো কন্ট্রোল করতে না পারেন, তবে বাইক চালানো শিখার আগেই আপনি দুর্ঘটনার শিকার হতে পারেন।
- মোটরসাইকেল এর সিট ফোম এর উপর প্লাস্টিক বেস র্যাপিং করা থাকে। একেক বাইকের সিটের ধরন এবং ওজন একেক রকম। কোন কোন বাইক এর সিট সামনের দিকে অনেক সরু করা থাকে। এতে বাইকে বসে পা মাটিতে ফেলতে সুবিধা হয়। আবার কোন বাইক সিটের ভিতর হাফ ইঞ্চি এর মত ফোম থাকে।
- আপনার দু পায়ের ফাক অনুসারে সিট এর প্রস্থ মিলাবেন, যেন আপনি সহজেই মাটি স্পর্শ করতে পারেন। সিট এর উচ্চতা আপনাকে মুখে বলে দিতে হবে না। মোটামুটি প্রস্থ সিট গুলো ২৭ ইঞ্চি এর মত হয়। এছাড়াও পাবেন ৩১ ইঞ্চি সুপার ন্যারো স্যাডেল।
- বাইক চালানোর ক্ষেত্রে ইঞ্জিন খুবই গুরুত্বপুর্ণ। চারটি ইনলাইন ট্রান্সভার্স (যা অনেক জাপানি বাইকে রয়েছে) ওয়াইডার বাইকের জন্য। অথবা ভি-টুইন্স এবং সিঙ্গেল সচরাচর স্লিমার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ফোর সিলিন্ডার ওয়াইডার বাইকের থেকেই বেশি প্রস্থের। আবার যখন প্যারামিটার ফ্রেম যোগ করা হবে, তখন প্রস্থ বেড়ে যাবে। কারন এটি ইঞ্জিনকে র্যাপিং করে রাখে। এমন ফ্রেম নিবেন, যার ইঞ্জিন স্লিমার। আপনি সহজেই বাইকে বসতে পারেন এবং সাচ্ছন্দ বোধ করেন।
- আপনার পায়ের পাতার পজিশন আরেকটি গুরুত্বপুর্ণ বিষয়। অনেকেই বাইক চালাতে চান অনেকটা রেসার এর মত। আবার অনেকেই সম্পুর্ন সোজা হয়ে বাইক চালাতে পছন্দ করেন। সঠিক পজশন হচ্ছে পা সামনের দিকে সোজা রাখা। এতে মোটরসাইকেল কন্ট্রোল করা সহজ হয়। আপনি সচরাচর লক্ষ করবেন, রোড বাম্পস এর উপর দিয়ে বাইক চালানোর সময় রোড বাম্প পায়ের খুব কাছাকাছি দিয়ে যায়। পা হালকা নিচু থাকলে আপনি আঘাত পাবেন। এমনকি পা ভেঙ্গে যেতে পারে।
এডজাস্টেবল লিভার্স আরেকটি গুরুত্বপুর্ণ বিষয়। যদি আপনার মোটরসাইকেল এ এডজাস্টেবল লিভার না থাকে, তবে আফটার মার্কেট থেকে নিয়ে আপনার বাইক আপগ্রেড করে নিন। এতে আপনার মোটোরসাইকেল এর ক্লাচ এবং ফ্রন্ট ব্রেক কমফোর্টলি ধরতে পারবেন।
আপনার বাইকের সাসপেনশন নিচে নামিয়ে ফেলা বোকামি ছাড়া আর কিছু নয়। সাসপেনশন নিচে নামিয়েও অনেক সময় আপনি বাইকে বসে মাটি স্পর্শ করতে পারবেন না। এতে টাকা নষ্ট হয় এবং মোটরসাইকেলের হ্যান্ডেলিং এ সমস্যা হয়। আপনি কখনই বাইকের সাসপেনশন নিচে নামানোর চিন্তা করবেন না। এতে বড় ধরনের বাইক দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
ডিসক্লাইমারস বা সাবধানতাঃ
১। বাইক চালানোর সময় প্রয়োজনীয় পোশাক পড়ে নিন। আমি হাতের গ্লোভস পড়ি নাই এবং আমার জিন্স আমাকে নিরাপত্তা দিতে পারবে না। তবে আমি বেশি স্পীড নিয়ে মোটরসাইকেল চালাই না।
২। আপনার প্রথম মোটরসাইকেল হিসেবে কখনই উচু বা বড় মোটরসাইকেল না নেওয়াটাই ভাল। উচু এবং বড় মোটরসাইকেল চালানোর কৌশল জেনে নিন। এতে আপনি হ্যান্ডেলিং সহজে আয়ত্ত করতে পারবেন।
৩। কিভাবে একটি উঁচু মোটরসাইকেল নিচু করবেন তা জানা থাকলে সহজেই উচু বাইক দিয়ে প্র্যাকটিস করতে পারবেন। সম্ভব হলে মাঠে ঘাসের উপর বাইক চালানো প্র্যাকটিস করুন।
৪। প্রয়োজনে একজন দক্ষ মোটরসাইকেল চালক এর সাহায্য নিয়ে আপনি বাইক চালানো প্র্যাকটিস করতে পারেন।
কিভাবে যেকোনো দিকে মোটরসাইকেল চালানো যায়ঃ
মোটরসাইকেল চালানোর জন্য মোটামুটি ভালো দক্ষতার প্রয়োজন। নিরাপদ স্থানে বাইক চালানো প্র্যাকটিস করা সবচেয়ে ভালো উপায়। এতে আপনি সহজেই অনেক ট্রিক্স শিখতে পারবেন।
কিছু বেসিক ট্রিক্সঃ
বাইকের সিটের উপর আপনার বডি নাড়ানো
বাইক চালানোর সময় আপনি যেদিকে আপনার পা নামাবেন সেদিকে আপনার বডি সামান্য ঘুড়ান, এতে আপনি আরও বেশি ভালো ভাবে পা নামাতে পারবেন। এমনকি সমান ভাবেও পা নামাতে পারবেন।
আপনার পায়ের পাতা কোন দিকে খেয়াল রাখুন
এটি খুব গুরুত্তপুর্ণ বিষয়। পায়ের পাতা সেই দিকেই থাকবে, যেদিকে আপনি পা নামাবেন। বাইক টার্ন করা বা বাইক থামানোর ক্ষেত্রে পায়ের পাতা খুব গুরুত্তপুর্ণ ভুমিকা পালন করে। এক্ষেত্রে কিভাবে একটি ভারী মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রন করবেন লক্ষ্য করুন। আপনি খাটো হলে আপনার জন্য খুব কষ্টকর হবে। তবে নিয়মিত প্র্যাকটিস করলে সমস্যা থাকবে না।
এডভান্স স্কিল
যখন আপনি বেসিক ট্রিক্স গুলো রপ্ত করতে পারবেন, তখন এই ট্রিক্স গুলো অনুসরন করুন।
স্ট্যান্ডঃ যখন আপনি বাইক থামাবেন, তখন আপনার সম্পুর্ন ওজন আস্তে আস্তে একদিকে হেলিয়ে দিন এবং যে দিকে হেলবেন সে পা নিচে নামিয়ে দিন। এতে পুরোপুরি মোটরসাইকেল থামাতে পারবেন। আপনার এক পা সমতল অবস্থায় মাটিতে দাঁড়ানো, অন্য পা বাইকের রেয়ার ব্রেকের উপর ৯০-ডিগ্রী এঙ্গেল এ বাঁকানো অবস্থায় থাকবে।
টিরেইন ব্যবহারঃ একটু চিন্তা করুন, আপনি বাইক চালিয়ে চারদিকে গোল হয়ে ঘুড়ছেন। ব্যাপারটা অনেক মজাদার, কিন্তু কস্টও অনেক। এর জন্য অনেক বেশী প্র্যাকটিস এর প্রয়োজন।
আপনি যদি সত্যিই বাইক চালাতে চান, তবে আপনাকে প্রথমেই বাইক চালানোর সঠিক পোশাক পরিধান করতে হবে, আপনার উচ্চতা যাই হোক। আপনার কাছে যখন এগুলো ভালো লাগতে থাকবে, তখন আপনি সবসময় মোটরসাইকেল চালাতে চাইবেন। তবে সব সময় মোটরসাইকেল চালানোর সময় সব ধরনের নিয়ম কানুন মেনে চলুন। নিরাপদের সাথে মোটরসাইকেল চালানো প্র্যাকটিস করুন। অসতর্ক বা অন্যমনস্ক হয়ে মোটরসাইকেল চালাবেন না।
Comments
Post a Comment