হাইওয়েতে বাইক চালানোর নিয়ম: ৮ টি গুরুত্বপূর্ণ টিপস এবং সতর্কতা

হাইওয়েতে বাইক চালানোর নিয়ম  ৮ টি গুরুত্বপূর্ণ টিপস এবং সতর্কতা

আজকের আলোচনার বিষয়বস্তু হলো হাইওয়েতে বাইক চালানোর জন্য কিছু প্রয়োজনীয় সতর্কতা মূলক টিপস।
আমাদের সবারই মাঝে মাঝে কিংবা প্রতিনিয়ত অনেকেরই হাইওয়েতে বাইক রাইড করতে হয় কোন কোন না কোন কাজে। অনেকে শখের বশে  দূরে বাইক রাইড করে থাকেন।
 এর মাঝে অনেকেই হয়তো অভ্যাস আছে আবার অনেকেই প্রথম উন্মুক্ত রাস্তায় অনেক হাই-স্পিড এ বাইক চালিয়ে যাবার অভ্যাস আছে, আবার অনেকেরই হয়তো নেই।


মোটর সাইকেল চালানো শুরুর আগে বাইকের প্রি রাইড চেক করুন


তাই হাইওয়েতে বাইক চালানোর সময় যেন আপনি কোন সমস্যা কিংবা দুর্ঘটনার শিকার না হোন তাই আজকের আমাদের এই আলোচনা। চলুন তবে জেনে নেই বিষয়গুলোঃ

১. হেলমেট ব্যবহার করাঃ

বাইক হেলমেট কিনবেন কীভাবেঃ কোন সাইজের হেলমেট নির্বাচন করবেন ও এর যত্ন।

আপনি যত দক্ষ চালকই হোন না কেন মনে রাখবেন আদর্শ বাইক রাইড করার জন্য হেলমেট ব্যবহার করার কথা আপনাকে সবাই বলবে। অনেকেই হয়তো নিয়মিত হেলমেট ব্যবহার করেন না।

Click to read more>>

মোটর বাইক চালানোর সময় আপনার কি কি পরিধান করা উচিৎ

তাঁদের জন্য হেলমেট ব্যবহার করার মাঝে অনেক সময় অনেক ধরণের ঝামেলার মুখে পরতে হয়। যেমন ধরুন অনেকেই বলেছেন, তারা বাইক রাইড করার সময় আশেপাশের অনেক কিছুই ভালো করে লক্ষ্য করতে পারেন না। এর ফলে অনেক সময় রাস্তার চলাচলের গুরুত্বপূর্ণ সাইনবোর্ড অথবা নির্দেশিকা গুলো ভালো করে লক্ষ্য করা যায়না।

আবার, অনেকের কাছে শ্বাসপ্রশ্বাস নিতে সমস্যা হয়। যদিও পুরো ব্যাপারটা আসলে অভ্যাসের, তাই বলছি এরকম ধরণের বিভিন্ন ঝামেলাগুলো দ্রুত মিটিয়ে হেলমেট ব্যবহারে সতর্ক হউন।

অনেকের কাছেই আমি শুনেছি এবং নিজেও বেশ কয়েকবার এরকম পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছি হেলমেট ব্যবহারের পর দেখা যায়, আপনার বাইক এর মিটার ডিসপ্লে এর তুলনায় আপনার নিজের কাছে মনে হবে বাইক এর গতি অনেক কম হয়তোবা আরও বাড়ানো প্রয়োজন।

কিন্তু, এরকম ভাবার ফলে ঘটে যেতে পারে বিপর্যয়। কারণ, হেলমেট পরিহিত অবস্থায় আপনার আশেপাশের বাতাসের চাপ আপনার মাথায় এতটা চাপ দিতে পারে যার ফলে গাড়ির গতি অনেক কম মনে হতে পারে তাই অল্প অল্প করে এর অভ্যাস করে নেয়াই শ্রেয়।

শুধু শুধু অভ্যাসের সামান্য আলসেমির জন্য নিজের জীবনের উপর কোন ঝুঁকি না নেয়াটাই হবে একজন আদর্শ বাইক চালক হিসেবে আপনার কাজ।

মোটরসাইকেল নির্বাচন করবেন কীভাবে: নতুন চালকদের মোটরসাইকেল নির্বাচন

২. গতির উপর নিয়ন্ত্রণঃ

  হাইওয়েতে বাইক রাইডিং এর ক্ষেত্রে গতির উপর নিয়ন্ত্রণ রাখাটা অনেক বড় একটা গুরুত্বের ব্যাপার। অনেক দক্ষ চালক ও ঝোঁকের মাথায় গাড়ির স্পিড নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে গিয়ে নিজের জীবনই হারাতে হয়েছে।
তাই, বাইক নিয়ে হাইওয়েতে স্পিড-শো করার বেঁচে থাকলে ভালো প্রশিক্ষন নিয়ে আপনি ভালো স্টান্ট শিখতে পারবেন। খুব সতর্ক ভাবে রাস্তার মাঝে বাইক চালাতে চেস্টা করুন প্রয়োজনীয় গতি নিয়ে নিন।
অনেক সময় রাস্তার মাঝে ছোট খাট কিছু গর্ত থাকে লম্বা দাগ ধরণের এসব ভাঙ্গা অংশ দেখে মনে হয় তেমন কিছু সমস্যা  করবেনা, কিন্তু এগুলো মাঝে মাঝে ভালো বিপত্তি ঘটিয়ে দিতে পারে।

যেমন ধরুন এই লম্বা দাগ গুলোর মাঝে আপনার বাইকের চাকা পরে গিয়ে বাইকের কন্ট্রোল চলে যেতে পারে মুহূর্তের মাঝেই।
 তাই খুব সতর্ক থাকুন এসব ছোট খাটো ব্যাপারে সাবধান হউন এবং অবশ্যই অপরিচিত রাস্তায় বাইক ভালোভাবে চালান নির্দিষ্ট স্পীড এ যা আপনার আয়ত্তের মাঝেই থাকবে এবং অপ্রীতিকর অবস্থায়ও যেন আপনি বাইক কন্ট্রোল করে নিতে পারেন সে জন্য।

৩. ব্রিজ কিংবা সেতুর মাঝে সাবধান থাকুনঃ

ব্রিজ কিংবা বড় ধরণের সেতুর মাঝে সাবধান থাকতে বললাম কেন তাই ভাবছেন? নদীর উপর নির্মিত সেতু কিংবা বড় ধরণের ব্রিজের মাঝে বাতাসের চাপ থাকে অনেক বেশি এবং অনেক এলোমেলো।

তাই, আপনার বাইকের যদি নিয়ন্ত্রণ জনিত সেই বাতাসের চাপে তবে সাবধানে নিয়ন্ত্রণ যোগ্য গতিতে বাইক চালানই ভালো যদিও এখনের সকল বাইকই প্রায় আধুনিক ভাবে এরো ডিজাইন সম্বলিত তার পরেও সাবধান থাকুন এই ব্যাপারে।

৪. বাস ট্রাক ওভারটেক এর ঝামেলাঃ

অনেক বাইক রাইডার এর কাছেই শুনেছি যে, হাইওয়ের মাঝে অনেক সময় দেখা যায় যে বড় দুরপাল্লার বাস কিংবা ট্রাক গুলো ওভারটেক করার প্রতিযোগিতা শুরু করে।

অনেক জায়গায়ই ওদের এসব কারনে সাধারণ অনেক বাইকার কিংবা পথচারীর মৃত্যুর খবর অবশ্যই আপনি শুনে থাকবেন। তাই এরকম পরিস্থিতির সম্মুখীন হলে নিজের মত নিরাপদ অবস্থানে থাকুন। কখনই আগ বাড়িয়ে আপনি ওভারটেক করতে যাবেন না ।

৫. স্পিড ব্রেকার লক্ষ্য করাঃ

রাস্তার মাঝে অনেক সময় অনেকেই স্পিড ব্রেকারের প্রতি একদমই নজর দিতে ভুলে যান অথবা রাস্তার পাশে থাকা বড় বড় গাছপালার ছায়ার কারনে রাতের বেলায় লক্ষ্য করা যায়না।

তাই ,বলছি এরকম অবস্থায় সতর্ক ভাবে রাস্তার স্পীড ব্রেকার কিংবা ভাঙ্গা গর্ত লক্ষ্য করে বাইক চালান। এতে করে ঝুঁকির আশংকা থাকবে অনেক কম।

৬. যানবাহন এবং তাঁদের গতিবিধি লক্ষ্য করে চলাঃ 

আপনার সামনে পিছনে কি ধরণের যানবাহন চলছে তাঁদের গতি কেমন কিংবা কিভাবে চালাচ্ছে তা সবসময় কিন্তু আপনাকে ফলো করতে হবে।

কারণ, আপনার সাথে চলাফেরা করা সবগুলো যানবাহনই আপনার সাথে একই রাস্তায় আছে এবং তাঁদের ও নির্দিষ্ট মাত্রার গতি এবং কন্ট্রোল ক্ষমতা আছে।

অনেক সময় পাশে থাকা গাড়ির কন্ট্রোল হারিয়ে আপনার বাইকে এসে ঠুকে দিতেই পারে, এটা অস্বাভাবিক কিছুই নয়। তাই এ ব্যাপারেও যথেষ্ট সতর্ক থাকুন। এবং ভারী যানবাহনের পিছনে চলার সময় তাঁদের গতিবিধির উপর লক্ষ্য রাখুন। উন্মুক্ত ভাবে রড, বাঁশ বহনকারী গাড়ি গুলোর পিছনে অথবা সাইডে সাবধানে থাকুন।

৭. রাস্তায় বৃষ্টি শুরু হয়ে গেলে কি করবেনঃ

বর্ষাকালে যেকোন সময় বৃষ্টি শুরু হতে পারে। অনেকেই হয়তো বৃষ্টির মাঝে বাইক চালিয়ে অভ্যস্ত। কিন্তু আপনি যদি অনভিজ্ঞ হউন, তবে কোথাও দাড়িয়ে বৃষ্টি কমার পর রাইড করাটাই মনে হয় ভালো হবে।
বৃষ্টি তে আপনার বাইকের টায়ার কিংবা গ্রিপিং অথবা রাস্তার সাথে চাকার সামঞ্জস্যতা ধরে রাখাটাই অনেক কঠিন ব্যাপার। আপনি প্রফেশনাল কোন রেস দেখলে দেখবেন যে, যখন ভেজা ভেজা আবহাওয়ায় কোন রেস হয় তখন রেসাররা কিছুক্ষন পর পর তদের বাইকের চাকা পাল্টাচ্ছে।

এ ধরণের টায়ার কে ওয়েট টায়ার বলে। ওয়েট টায়ার থাকলে আপনার বাইকের স্পীড কমে যাবে আবার বেড়ে যাবে এমন সমস্যা হবে আবার গ্রিপিং সঠিক ভাবে নাও হতে পারে পিচ্ছিল ভাবের জন্য। তাই এসব ব্যাপারে খুব সাবধান হউন ।

৮. রাস্তার বাঁক লক্ষ্য করে চলাঃ 

রাস্তার মাঝে থাকা টারনিং পয়েন্ট মানে বাঁক গুলো দেখে চালান এবং বুঝে নিন কিভাবে সেই জায়গাটুকু আপনি রাইড করে পার হবেন। আপনার বাইকের সুবিধা এবং কার্যক্ষমতা বুঝে এসব টার্নিং পয়েন্টগুলোর মাঝে টারনিং কিংবা কর্নারিং করে জায়গাটুকু পার হয়ে যান।

আপনার চাকার আকৃতির উপরেও নির্ভর করে আপনি কিভাবে এই ধরণের জায়গা পার হবেন যেমন ধরুন এফ জেড বাইকের চাকা একটু গোল আকৃতি হবার কারনে এটি দিয়ে আপনি ভালোভাবে টার্নিং কিংবা কর্নারিং করে পার হতে পারবেন। আবার অন্যান্য  বাইক যেমন পালসার কিংবা হাংক হলে ঝামেলায় পরতে পারেন সেক্ষেত্রে সাবধানে চালান।

এ ব্যাপারে কিছু  বিষয় আলাদা ভাবে দেখুনঃ

১. রাস্তাটি অমসৃণ কিংবা ভাঙ্গাচোরা আছে কিনা।
২. কর্নারিং করার জন্য রাস্তার বাঁক এর প্রশস্ত কতটুকু
৩. পিচ্ছিল কিংবা কর্দমাক্ত কিনা
উপরোক্ত ব্যাপার গুলো থাকলে কর্নারিং করা আপনার জন্য বিপদজনক  হতে পারে।

সবশেষে বলবো যখনই যেখানে বাইক রাইড করুন না কেন নিজের থেকে নিজের জীবনের কথা চিন্তা করে বাইক চালান। সাবধানতা এবং নিয়ম মেনে চালান।

বেপরোয়া ভাবে চালাতে গিয়ে নিজের জীবন বিপদের মুখে ঠেলে দিবেন না। দিনের বেলা কিংবা রাতের বেলা যখনই হাইওয়েতে বাইক চালাবেন আশেপাশের সবকিছুর প্রতি ভালো করে নজর রেখে চালান।
রাতের বেলায় আপনার হেড লাইট ভালো করে চেক করে পরে বাইক নিয়ে বের হউন। অবশ্যই স্বচ্ছ এবং ভালো মানের লাইট ব্যবহারের প্রতি গুরুত্ব দিন। এতে করে আপনারই জীবনের প্রতি ঝুঁকি কমে যাবে।
আশা করি উপরের কিছু সতর্কতা মেনে চললে আপনার বাইক রাইডিং হবে আরও বেশি নিরাপদ তাই হাইওয়েতে বাইক রাইড করার সম্পূর্ণ মজা উপভোগ করতে নিজ দায়িত্বে সাবধানতা অবলম্বন করে বাইক চালান।
মনে রাখবেন, একটি দুর্ঘটনা হতে পারে আপনার সারা জীবনের অপূর্ণতার কান্না।

নুতন মোটরবাইক কেনার ১0 টি অত্যাবশ্যক টিপস

বাংলাদেশে জনপ্রিয় ১০ টি ১০০ সিসি মোটর বাইক

মোটরসাইকেল ধৌত করার সর্বোত্তম ১০টি টিপস।

===========================================


মোটর বাইক রিভিউ পড়তে পারেন  bike.com.bd সাথে জেনে নিন মোটর বাইকের দাম

মোটরবাইক লাইসেন্স এবং মোটরসাইকেল নিবন্ধন ফি পুনঃনির্ধারণ

মোটর সাইকেল ড্রাইভিং লাইসেন্স কিভাবে করবেন? 

ড্রাইভিং লাইসেন্স করার উপায়

ড্রাইভিং লাইসেন্সের লিখিত পরীক্ষার স্ট্যান্ডার্ড প্রশ্ন ব্যাংক ও উত্তর

মোটর বাইকিং And ড্রাইভিং A টু Z [পর্ব-০১] :: সূচনা, বিভিন্ন মটরসাইকেল, কেনার সময় লক্ষণীয় ও বাইক ইঞ্জিন

Comments