বাইক চালকদের জন্য এক্সপার্টদের ১০ টি নিরাপত্তা টিপস
বাইক চালকদের জন্য এক্সপার্টদের ১০ টি নিরাপত্তা টিপস নিয়ে আজকে আমরা আলোচনা করব।মোটর সাইকেল চালানো একটা ফান। কিন্তু গাড়ীর তুলনায় এটা একটু বেশী বিপদজনক। পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায় যে, গাড়ীতে দুর্ঘটনার জন্য যত মানুষ মারা যায় মোটর সাইকেল দুর্ঘটনায় তার চেয়ে ৩০ গুন বেশী মানুষ মারা যায়।
আর এইসব দুর্ঘটনার মধ্যে ৫০% মৃত্যু হল শুধুমাত্র সিঙ্গেল বাইক এক্সিডেন্ট।
এই সংখ্যা যারা পুরাতন চালক তাদের জন্য আরও ভয়াবহ। যারা অনেকদিন পর আবার মোটর সাইকেল চালানো শুরু করেছে। এর কারণগুলির মধ্যে আছে ধীর গতির রিফ্লেক্স, দুর্বল দৃষ্টি শক্তি, নাজুক হাড় ও অন্যান্য অসুবিধা যা সাধারণত ৫০ বছর বয়সের পর হয়ে থাকে।
আর দেখা গেছে যে, অল্প বয়স্ক চালকদের তুলনায় ৫০ বছরের উপর বয়সী চালকদের দুর্ঘটনার আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার সংখ্যা ৩ গুন বেশী।
তবে এমনও অনেক আছে, যারা জীবন ভরে কোন বাইক এক্সিডেন্ট ছাড়াই মোটর বাইক চালিয়েছেন। আপনার বাইক দুর্ঘটনা এড়ানোর সবচেয়ে ভাল উপায় হল রিস্ক এড়িয়ে চলা ।
বাইক চালকদের জন্য এক্সপার্টদের ১০ টি নিরাপত্তা টিপস
এমন গাড়ি কিনবেন না যা আপনি হ্যান্ডেল করতে পারবেন না-
আপনি যদি অনেক দিন মোটর সাইকেল না চালান তাহলে এখন যেসব মটর সাইকেল বাজারে এসেছে সেগুলির পারফরম্যান্স দেখে আপনি অবাক হবেন। এখনকার মোটর বাইকগুলি অনেক দ্রুত গতিসম্পন্ন ৫ বা ৭ বছর আগের বাইকের তুলনায়।
মোটরসাইকেল নির্বাচন করবেন কীভাবে: নতুন চালকদের মোটরসাইকেল নির্বাচন click to read
বাইক কেনার আগে মনে রাখুন, যেটা আপনার জন্য ফিট সেটাই কিনবেন।যখন বসবেন দেখুন সহজেই আপনি আপনার পায়ের পাতা মাটিতে সমানভাবে রাখতে পারেন কিনা। হ্যান্ডেলবার ও কন্ট্রোল আপনার আওতার মধ্যে আছে কিনা।
এমন মডেল পছন্দ করুন যেটা থেকে আপনি সহজেই ওঠা নামা করতে পারেন আর আপনার কাছে খুব ভারী না মনে না হয়। শুরুর জন্য ১০০ সিসির ইঞ্জিন ভাল ।
বাংলাদেশে জনপ্রিয় ১০ টি ১০০ সিসি মোটর বাইক
কেনার আগে এর নির্ভরতা ও অন্যান্য গ্রাহকের কতটা ভাল লেগেছে সেই রিপোর্ট দেখে নিন।
একটি এন্টিলক ব্রেক কিনুন
এখন অনেক মডেলের এন্টিলক পাওয়া যায়। এটা পরীক্ষিত ভাবে জীবন সুরক্ষা করে। গবেষণায় দেখা গেছে যে, যেসব মটর সাইকেল এন্টিলক ব্রেক থাকে এগুলির কোন দুর্ঘটনায় আক্রান্ত হওয়ার সম্বাবনা ৩৭% কম।
তা , সে আপনি যেরকম চালক ই হোন না কেন। এন্টিলক ব্রেক সব সময় চালকের চেয়ে ভাল ব্রেক করতে সক্ষম।
কারনটা খুব সাধারন। ব্রেক লক করা কোন এমেজেন্সি অবস্থায় চালক স্টিয়ারিং কন্ট্রোল করতে পারেনা। যাতে সহজেই দুর্ঘটনা ঘটে। এর ফলে চালকের জীবনও হুমকির মুখে পড়ে। এন্টিলক কোন এমারজেন্সি মুহূর্তে আপনাকে স্টিয়ারিং কন্ট্রোল করতে সাহায্য করবে।
আর স্লিপারি অবস্থায় এটা বেশী কার্যকরী আপনার জন্য।
এখন অনেক হাই-এন্ড মডেলে এই ফিচারটি থাকে। বাইক কেনার আগে,আপনার নিরাপত্তার জন্য এটি একটি ভাল বিনিয়োগ।
আপনার বাইক চালানোর স্কিল বাড়ান
অনেক ভাল ও পুরাতন চালকেরাই আপনাকে পরামর্শ দেবে যে বাইক চালানো শুরুর আগে ভালোভাবে বাইক চালানো শিখা প্রাকটিস করুন। কোন ইন্সটিটিউট থেকে কিভাবে বাইক চালাতে হয় শিখুন।
তাতে টাকা খরচ হলেও আপনি ভালভাবে ও অনেক এডভান্স টেকনিক এবং বাইক চালানোর কৌশল শিখতে পারবেন।
মাথাকে সুরক্ষিত রাখুন
বাইকের হেলমেট একটি আবেগঘন বিষয় কিছু বাইক চালকের জন্য। কিন্তু সত্যি জানলে আপনি সত্যি রিস্ক অনুভব করবেন। যেসব চালক হেলমেট ব্যবহার করেন না তাদের দুর্ঘটনা ঘটলে ৪০% বেশী সম্ভাবনা থাকে মাথায় খুব বেশী আঘাত পাওয়ার।
আর ৩ গুন বেশী সম্ভাবনা থাকে ব্রেইন ইঞ্জুরি হওয়ার আর এই তুলনাটা যারা হেলমেট ব্যবহার করেন তাদের সাথে।
হেলমেট আইন মেনে না চললে ব্রেইন আর পাজরের প্রতি অনেক ট্রমা হবে। এই দুর্ঘটনা হেলমেট ঠেকাতে পারে।
ট্রান্সপোর্ট ডিপার্টমেন্ট থেকে অনুমোদনকৃত মুখ ঢাকা হেলমেটই সবচেয়ে ভাল। আজকালকার হেলমেটগুলি অনেক মজবুত, হালকা আর আরামদায়ক। আর এগুলি বাতাসের শব্দ কমিয়ে ফেলে।
মনে রাখবেন, সময়ের সাথে সাথে হেলমেট পুরানো হয় তাই দেখতে ভাল হলেই মনে করবেন না যে এটি ঠিক আছে।
হেলমেট টেস্টিং অরগানাইজেশান এবং অভিজ্ঞরা সুপারিশ করেন যে, প্রতি ৫ বছর পর পর বা এটি নস্ট হয়ে গেলেই হেলমেট পরিবর্তন করতে হবে।
চুলের তেল বা অন্যান্য কারনে হেলমেট নষ্ট হয়ে যাওয়া থেকে যাতে হেলমেট নস্ট না হয় এজন্য আজকাল হেলমেটের ডিজাইন ও ম্যাটেরিয়াল দুটোই পরিবর্তিত হয়েছে।
সঠিক পোশাক পরিধান করুন
জিন্স, টি শার্ট আর স্যান্ডেল হল বাইক দুর্ঘটনার প্রথম রেসিপি। তাই রাস্তার ধুলা, ঠাণ্ডা বাতাস, রোড রাশ সবকিছু থেকে প্রতিরক্ষার জন্য দরকার সঠিক পোশাক। সরবোচ্চ প্রতিরক্ষার জন্য লেদার জ্যাকেট , গ্লভস, ফুল প্যান্ট , আংকেল ঢাকা জুতা, এমনকি গরম কালেও আপনি এই পোশাক পড়বেন।
মোটর বাইক চালানোর সময় আপনার কি কি পরিধান করা উচিৎ Click to read
বিশেষভাবে ডিজাইন করা জ্যাকেটে রয়েছে নরম আরামদায়ক প্যাড আর ভেন্টিলেশান রয়েছে গরমে বাতাস আশা যাওয়ার জন্য। আপনি আপনার চোখের জন্য তো প্রতিরক্ষা চান।
শুধুমাত্র আই গ্লাসেস এর উপর নির্ভর করবেন না। তাই হেলমেট ব্যবহার করবেন। গাড়ি চালকেরা যখন মোটর সাইকেলের সাথে দুর্ঘটনা ঘটায় তারা প্রায়ই বলে যে তারা দেখতে পায়নি। তাই উজ্জ্বল রঙের সব পোশাক আর হেলমেট নিবেন ।
ডিফেনসিভ হোন
সম্প্রতি ফ্লোরিডা বিশ্ববিদ্যালয় এক গবেষনায় দেখা গেছে যে , গাড়ি ও মোটর সাইকেল এর দুর্ঘটনায় ৬০% দোষ গাড়ি চালকের। তাই মোটর সাইকেল চালক হিসেবে আপনাকে অতিমাত্রায় সতর্ক হতে হবে যখন আপনি ফোনে কথা বলেন বা টেক্সট করেন মোটর সাইকেল চালানো অবস্থায় ।
তাই রাস্তায় গাড়ির দিকে সতর্ক চোখ রাখুন কখন কিভাবে লেন পরিবর্তন করে। তাই খুব কাছাকাছি যাবেন না গাড়ির। নিরাপদ দুরত্তে থাকুন যাতে আপনার কাছে থামার যথেষ্ট যায়গা থাকে।
একটা গাড়ি হটাৎ করে থামাতে পারে যা মটর সাইকেল চালকের জন্য বড় বাধা হতে পারে।
খারাপ আবহাওয়া এড়িয়ে চলুন
স্লিপারি অবস্থায় রাস্তায় দুর্ঘটনার সম্ভাবনা বেশী। বৃষ্টি শুধুমাত্র আপনার দৃষ্টিকে ঝাপসা করে না এটি টায়ারের গ্রিপ ক্যাপাসিটিও দুর্বল করে। বৃষ্টিতে যদি আপনি বাইক চালান তবে মনে রাখবেন বৃষ্টিতে বাইক চালানোর সবচেয়ে খারাপ সময় হল বৃষ্টি শুরু হওয়ার পরপরই।
বৃষ্টির মধ্যে বাইক চালানোর নিয়ম কানুন Click to read
বৃষ্টির মধ্যে ব্রেকের ব্যাপারে বেশী সতর্ক হউন আর স্টিয়ারিং এর ব্যাপারে মনোযোগ দিন।
বাতাস যদি আপনার উল্টা দিকে থাকে তাহলে সেদিকে বাইক চালানোর ক্ষেত্রে সতর্ক থাকুন। এতে আপনার সুরক্ষা বাড়বে।
রাস্তার ঝামেলাগুলিতে চোখ রাখুন
রাস্তার প্যাভমেন্টের সাথে গাড়ির চেয়ে মোটর বাইকের বেশী কন্টাক্ট হয়। রাস্তার বালি বা ভিজা পাতাও অনেক সময় আপনার বাইক স্লাইড করার কারণ হতে পারে। গাড়ির মাধ্যমে তো বাইকের দুর্ঘটনা অনেক বেশী ।
কিভাবে হবেন একজন দক্ষ মোটর বাইক চালক click to read
আপনি যদি এদের এড়িয়ে চলতে না পারেন আপনার গতি ধীর করুন আর রেল রোড ক্রসিং এ সঠিক পন্থা অবলম্বন করুন যাতে আপনার বাইক স্কিড না করে।
মোটরবাইক নিয়ে রেল লাইন রোড ক্রসিং করবেন কীভাবে click to read
রোল করা জন্য প্রস্তুত থাকুন
প্রতিবার বাইক চালানো শুরুর আগে চেক করুন যে আপনার বাইকের সিগন্যাল, লাইট , হর্ন , বেল্ট, ব্রেক , শ্যাফট সবকিছু ঠিকমতো কাজ করছে।
মোটর বাইক চালানোর নিয়ম এ আপনি যতই দক্ষ হন না কেন, মোটর বাইক চালানো শুরুর আগে আপনি অবশ্যই বাইকের প্রি রাইড চেক করুন। click to read
টায়ার পরীক্ষা করে দেখুন প্রেসার ঠিক আছে কিনা। ইনফ্লেটেড টায়ার আর পুরাতন ব্রেক মোটর সাইকেল দুর্ঘটনার বড় কারণ।
টায়ার ইনফ্লেটেড থাকলে বাইক হান্ডলিং অনেক বেশী কস্টকর। কারণ স্টিয়ারিং শক্ত হয়ে যায় আর বাইক সহজে নড়তে চায়না।
তাই নুতন চালকেরা এসব বাইক চালানোর নিয়ম কানুন সব মেনে বাইক চালানো শুরু করবেন। আপনার মোটর বাইক যাত্রা শুভ হোক।
Comments
Post a Comment